"সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি পার্বত্য চট্টগ্রাম"
পার্বত্য চট্টগ্রাম। নামেই যার পরিচয়। যেদিকে তাকাবেন সেদিকেই শুধু পাহাড় আর পাহাড়। সবুজ বনানীতে আবৃত এই পাহাড়গুলোর সৌন্দর্য লিখে বা বলে বোঝানো যাবে না। এর মহত্ সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে হলে আপনাকে অবশ্যই যেতে হবে সেখানে। দেশের সমতল এলাকার তুলনায় এ অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি সম্পূর্ণ আলাদা। ছোট-বড় পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে এখানে রয়েছে পাহাড়ী ঝিরি বা ছড়া। পাহাড়ি ভূমির ঘন সবুজ অরণ্যের বুক চিরে বয়ে গেছে খরস্রোতা চেংঙ্গী, ফেনী, মাইনী, কর্ণফুলী, শঙ্খ ও মাতামুহুরী নদী। কাসালং, রাইখাং, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী উপত্যকার এক হাজার ৪শত বর্গমাইল জুড়ে বিস্তৃত বনাঞ্চলে নানা পশুপাখির বাস। এত পাহাড়, বন-বনানী, পাখ-পাখালির কলকাকলী, এত ঝরণা,হ্রদ আমাদের দেশের আর কোথাও নেই। এখানে আছে কয়েক হাজার ফুট পর্যন্ত উঁচু পাহাড়।আকাশের মেঘ ছুঁয়ে যায় পাহাড়ের বুক।
বান্দরবান জেলায় অবস্থিত দেশের সর্বোচ্চ পর্বত বিজয়গিরি ও কেউক্রাডং। এরপরই রাঙ্গামাটির অনতিদূরে আছে ফোর মইন পাহাড়। এছাড়াও আছে বান্দরবনের চিম্বুক পাহাড় আর খাগড়াছড়ির অহংকার বলে পরিচিত আলুটিলা পাহাড়। পাহাড় আর সবুজ বনের সমারোহে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল প্রকৃতির এক অপরূপ লীলাভূমিতে পরিণত হয়েছে। এছাড়া সেখানে রয়েছে ছোট-বড় কিছু হূদ প্রকৃতিকে করে তুলেছে আরও মোহনীয়। রাঙ্গামাটির ২৬৫ বর্গমাইল দীর্ঘ হ্রদে ভ্রমণ পর্যটকদের জন্য এক আনন্দময় অভিজ্ঞতা। হ্রদটির কোথাও কোথাও মাথা তুলে আছে নিমজ্জিত পাহাড়ের শীর্ষদেশ। বিশাল এই হরদের
স্বচ্ছ রূপালী জলে হরেক রকমের মাছের খেলাও দেখার মতো। বড়শি দিয়ে হরদের মাছ ধরার মজাই
আলাদা।
খাগড়াছড়ি জেলার মাইসছড়ির নুনছড়ি এলাকায় প্রায় দেড়হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের
চূড়ায় অবস্থিত 'মাতাই পুখিরী' নামক হ্রদটি প্রকৃতির আরেক বিস্ময়। চারদিকে মালভূমি দ্বারা বেষ্টিত
হ্রদটি সত্যিই দেখার মতো। স্থানীয় পাহাড়িরা বলে, পাহাড়ের উপরের এই হ্রদে কখনো পানি কমে না এবং পানি অপরি হয় না বলে তারা এর নাম দিয়েছে 'মাতাই পুখিরী' অর্থাৎ দেবতার পুকুর।
এছাড়াও খাগড়াছড়ির আলুটিলা রিছাং ঝর্না, দীঘিনালার তৈদুছড়া জলপ্রপাতও পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ রাঙ্গামাটির কাপ্তাই-এ আছে প্রাচীন রাইনখ্যাং হরদ এবং বান্দরবানের রুমা উপজেলায় রয়েছে 'বগাকাইন' হরদ। ১২৫ ফুট গভীর এই হ্রদের পানিতে কোন শ্যাওলা বা কোন জলজ উদ্ভিদ নেই এবং এর পানিতে কোন জলজ প্রাণী বাঁচেও না। ৫শ' ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এই হ্রদটি দেখে না আসলে বড় ধরনের ভুল
করবেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে আছে বেশ কিছু ঝর্না ও জলপ্রপাত। রাঙ্গামাটি থেকে নৌপথে শুবলং যাওয়ার
পথে বেশ কয়েকটি সুন্দর পাহাড়ি ঝর্না দেখা যায়। বান্দরবানের চিম্বুক আর উপরাম পাড়ার সুউচ্চ সুদৃশ্য জলপ্রপাতের পাশাপাশি ধলগিরিতে লংট্রাই পর্বতশৃঙ্গের কাছেও আছে একাধিক জলপ্রপাত। এসব আপনার স্মৃতিতে চিরজাগরুক হয়ে থাকবে।
খাগড়াছড়ির সুউচ্চ আলুটিলার বটমূলে দাঁড়িয়ে পূবদিকে তাকালেই দেখা যাবে পার্বত্য শহর খাগড়াছড়ি। বন্ধুর সেই পাহাড়ি উপত্যকায় গড়ে উঠেছে কত না সুদৃশ্য ভবন, ঘরবাড়ি। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে রোদ ঝলমল টিনের চালাঘর পাহাড়ি সৌন্দর্যে যোগ করেছে এক ভিন্ন মাত্রা। সূর্যাস্তের পর আলুটিলা থেকে রাতের খাগড়াছড়ি দেখতে আরও ভালো লাগে। দূর থেকে দেখা যায় ঘন
কালো অন্ধকারে লাখো বাতির মিটিমিটি আলো। যেন কোন শিল্পীর তুলিতে আঁঁকা ছবি।
পার্বত্য ( খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান) জেলা থেকে আগত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের একটি আঞ্চলিক সংগঠন "পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ"।
যদিও সংগঠনটির সূচনালগ্ন ১লা নভেম্বর ১৯৯১। তথাপি এই সংগঠনটি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৯ থেকে আহ্বায়ক আর ২০১২ থেকে কমিটির যাত্রা শুরু করে আসছে একটি শাখা হিসেবে। যার মূল লক্ষ্য পার্বত্য অঞ্চল থেকে আসা নবীন শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রমে সহযোগিতা করা, আবাসন ব্যবস্থা, টিউশনব্যবস্থাসহ শিক্ষক, সিনিয়র-জুনিয়রের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা, ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে তোলে নিজেদের মধ্যে ভালোবাসার এক নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করা। যা ইতিমধ্যে করে আসছে সংগঠনটি। তাছাড়া পার্বত্য অঞ্চলের বাঙালীরা পড়াশোনায় পিছিয়ে আছে। তাই এই সংগঠনটি শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের স্বার্থে কোটার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে রাজি করিয়েছে এবং কোটা বৃদ্ধির জন্য এখনো কাজ করে যাচ্ছে।
এছাড়াও সংগঠনটি নিজ জেলার সুবিধা বঞ্চিত মানুষকে সহয়তা, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে উদ্ভুদ্ধকরণ, নিজেদের মধ্যে সুদৃঢ় সম্পর্ক করতে চড়ুইভাতি, বারকিউ পার্টি, শিক্ষা সফরসহ ইত্যাদি কার্যক্রমের আয়োজন করে আসছে।
সর্বশেষ সংযোজন- জুন ২০২০